শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক:
সিরিজ জয়ের মিশনে মাঠে নেমে উজ্জীবিত থাকার বদলে উল্টো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো বাংলাদেশ। এলেন, দেখলেন, চলে গেলেন! এটিই ছিল আজ (রোববার) বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ইউনিটের গল্প। হঠাৎ করেই জ্বলে উঠলেন নিউজিল্যান্ডের দুই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও রাচিন রবীন্দ্র। তাদের সামলতেই হিমশিত অবস্থা টাইগার ব্যাটসম্যানদের। এজাজ-রাচিনের আগুনে পুড়েছে বাংলাদেশ। জেতাতে পারেননি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লড়া মুশফিকুর রহিমও। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয়টিতে ৫২ রানে হেরে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের। খেলায় হার-জিত থাকেই। কিন্তু লড়াই করার মানসিকতা তো থাকবে! সেই মানসিকতা একদমই দেখা যায়নি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। প্রতিপক্ষকে ইদানীং নিয়মিতই লজ্জায় ফেলা টাইগাররা এবার নিজেরাই দেখলো সেই বিভীষিকা।
সিরিজ জিততে নেমে মাত্র ৭৬ রানেই গুটিয়ে গেলো রিয়াদ বাহিনী। সময়মতো ঘুরে দাঁড়াল নিউজিল্যান্ড। ৫২ রানের বড় জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এখন ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে টম ল্যাথামের দল। লক্ষ্য ১২৯ রানের। দেখেশুনে খেললে জয় পেতে কষ্ট হওয়ার কথা ছিল না। ওপেনিং জুটিতে লিটন দাস আর নাইম শেখ ১৭ বলেই তুলে ফেলেছিলেন ২৩ রান। কিন্তু ১১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করে লিটন আউট হওয়ার পরই বিপদ নেমে আসে স্বাগতিক শিবিরে। ম্যাকঞ্চির বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন লিটন। পরের ওভারেই সাজঘরে শেখ মেহেদি হাসান। প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে আসা মেহেদি (৪ বলে ১) বাজে শট খেলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ হন। অ্যাজাজ প্যাটেল ওই ওভারে তুলে নেন আরও এক উইকেট। এবার আউট অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। উইকেটে এসেই লংঅনে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার (২ বলে ০)। এরপর হতাশ করেছেন নাইম শেখও। দেখেশুনে খেলতে থাকা এই ওপেনার বোল্ড হন রাচিন রবীন্দ্রর বলে, ১৯ বলে দুই বাউন্ডারিতে তখন ১৩ রানে নাইম।
বিপদের দিনে হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা টাইগার অধিনায়ক এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ দেন (৩) ইনিংসের দশম ওভারে। অ্যাজাজ প্যাটেলের ওই ওভারের পরের বলেই বোকা বনেন আফিফ হোসেন ধ্রুবও (০)। অনেকটা ইয়র্কার লেহ্নের মতো পরা ডেলিভারি ব্যাটে আটকাতে গিয়েও বোল্ড হন এই বাঁহাতি। ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর কখনই লড়াইয়ে ছিল না টাইগাররা। মুশফিকুর রহীম একটা প্রান্ত ধরে রাখলেও মাথার ওপর রানের চাপ বেড়েই গেছে। সেই চাপ সামলে কাছাকাছিও যেতে পারেনি রিয়াদ বাহিনী। মুশফিক ৩৭ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশকে এমন লজ্জায় ফেলার কারিগর কিউই দুই স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল আর কোল ম্যাকেঞ্চি। প্যাটেল ১৬ রানে ৪টি, ম্যাকেঞ্চি ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট। এর আগে টম ব্লান্ডেল আর হেনরি নিকোলসের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ভর করে ৫ উইকেটে ১২৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। ৬২ রানেই তারা খুইয়েছিল ৫ ব্যাটসম্যানকে। টসভাগ্য আজ সহায় ছিল না টাইগারদের। প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। প্রতিপক্ষের দুর্বলতার কথা মাথায় রেখে বরাবরের মতো স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এবার শুরুতেই কিউইদের ধাক্কা দেয়া যায়নি। শেখ মেহেদি হাসান প্রথম ওভারে দেন ১১ রান। দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বসেন একাদশে ফেরা ফিন অ্যালেন। নাসুম আহমেদ করেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেও একটি বাউন্ডারি হাঁকান অ্যালেন। যদিও নাসুম পরে ভালো বল করেছেন। ওভারে সবমিলিয়ে দেন মাত্র ৫ রান। তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বলেই উইকেট। সেই অ্যালেন, যিনি কিনা মারমুখী ভূমিকায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। সফট ডিসমিসাল যাকে বলে! মোস্তাফিজের ফুলার ডেলিভারি বুঝতে না পেরে আলতো ব্যাট ছুঁইয়ে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দেন অ্যালেন (১০ বলে ১৫)। মোস্তাফিজ ওই ওভারে নেন উইকেট মেইডেন।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে চোখ রাঙানি দিচ্ছিল রাচিন রবীন্দ্র আর উইল ইয়ংয়ের জুটি। ২৬ বলে ৩১ রান যোগ করেন তারা। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪০ রান তুলে কিউইরা। বেশ অস্বস্তিতেই পড়ে গিয়েছিল স্বাগতিক দল। সেই অস্বস্তি দূর করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সপ্তম ওভারে এসে তিন বলের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ওভারের চতুর্থ বলে তার শিকার ইয়ং (২০), ষষ্ঠ বলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (০)। দশম ওভারে মাহমুদউল্লাহর ঘূর্ণিতে বোল্ড হন রাচিন রবীন্দ্র (২০ বলে ২০)। পরের ওভারে আরও এক উইকেট হারায় কিউইরা, এবার দলের অধিনায়ক। শেখ মেহেদিকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন টম ল্যাথাম (৯ বলে ৫)। ৬২ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ধুঁকতে থাকা নিউজিল্যান্ড দেখেশুনে এগোনোর চেষ্টা করে। ঝুঁকিপূর্ণ শট বাদ দিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নেন হেনরি নিকোলস আর টম ব্লান্ডেল। কৌশলটা মোটামুটি কাজে দিয়েছে বলা যায়। কিউই যুগল উইকেটে সেট হয়ে শেষদিকে হাত খুলেছেন। তাতে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ বলে ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে উঠে। ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩০, নিকোলস ২৯ বলে ৩৬ রানে অপরাজিতই থেকে যান। বল হাতে সবচেয়ে সফল সাইফউদ্দিন। ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। মোস্তাফিজ সমান ওভারে ২৯ এবং শেখ মেহেদি ২৭ রানে নিয়েছেন একটি করে উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১০ রানে এক ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন। তবে সাকিব ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। নাসুমও পাননি উইকেটের দেখা, তবে ভালো বোলিং করেছেন। ২ ওভারে তার খরচ ১০ রান। সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১২৮/৫ (অ্যালেন ১৫, রাচিন ২০, ল্যাথাম ৬৫*, ইয়াং ২০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, ল্যাথাম ৫, নিকলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ৩০*; মেহেদি ৪-০-২৭-১, নাসুম ২-০-১০-০, মুস্তাফিজ ৪-১-২৯-১, সাকিব ৪-০-২৪-০, সাইফ ৪-০-২৮-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-১০-১) বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ৭৬ (নাঈম ১৩, লিটন ১৫, মেহেদি ১, সাকিব ০, মুশফিক ২০*, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, সোহান ৮, সাইফ ০, নাসুম ১, মুস্তাফিজ ৪; ডাফি ৪-০-১৫-০, এজাজ ৪-০-১৬-৪, ম্যাকনকি ৪-০-১৫-৩, রাচিন ৪-০-১৩-১, কুগেলাইন ৩-০-১৪-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ০.৪-০-৩-১)